ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​শীতে পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৩-১২-২০২৪ ০৪:১৬:২৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৩-১২-২০২৪ ০৪:১৬:২৮ অপরাহ্ন
​শীতে পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার ​সংবাদচিত্র : সংগৃহীত
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যটকে টইটম্বুর থাকে কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের নোনাজলে গা ভেজাতে ছুটে যান দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। শেষ হচ্ছে ঘটনাবহুল ২০২৪। ফলে এবার পর্যটন ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনার কারণে কয়েক বছর কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায় ভাটা পড়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরে ব্যবসায় অর্থ লগ্নি করেও আর আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পর্যটকের ঢল নেমেছে কক্সবাজারে। অন্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। 

গেলো সপ্তাহে বিশেষ করে ১৬ ডিসেম্বরের আগে দু-দিন সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে চারদিনের ছুটিতে আশাতীত পর্যটকের উপস্থিতি বাড়ে কক্সবাজারে। চলতি সপ্তাহেও পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। আসছে ২৫ ডিসেম্বর, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিনের উৎসব, সেই সঙ্গে থার্টিফার্স্ট নাইট ঘিরে পর্যটকের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।

সৈকতের সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের বেলাভূমিতে ভিড় করছে লাখো পর্যটক। শীত উপেক্ষা করে তীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের নীল জলরাশিতে গা ভেজাচ্ছেন সমুদ্রপ্রেমীরা। অনেকে জেটস্কি করে ঢেউ মাড়িয়ে দূর সাগরে যাচ্ছেন। অনেকে আবার ঘোড়ার পিঠে চড়ে রাজকীয় অনুভূতি উপভোগ করছেন। সেখানেই অনেক পর্যটক বালিতে রেখেছেন লাগেজ ও ব্যাগ। অনেকে আবার অবস্থান নিয়েছেন কিটকটে। রাজশাহী থেকে সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে যাওয়া আরিফুল হক বলেন, ‘সকালে কক্সবাজার পৌঁছানোর পর রুম পেতে ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে জেনে সৈকতে চলে আসি। এখানে এসে দেখি ধারণার চেয়ে বেশি মানুষ কক্সবাজার সৈকতে এসেছে।’

সৈকতে ব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে যাওয়া ঢাকার মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের ইমন হোসেন বলেন, পড়ালেখা শেষ, চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে আট বন্ধু মিলে ঘুরতে বের হয়েছেন তারা। খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের মিরিঞ্জা ভ্যালি দেখে কক্সবাজার সৈকতে যান। কয়েক ঘণ্টার জন্য রুম নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিন হাজার টাকা ভাড়া চাওয়ায় ব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে সৈকতে চলে যান।

কুমিল্লা থেকে যাওয়া মীর মোহাম্মদ জানান, সকালের বাসে কক্সবাজার পৌঁছার পর বাইপাসে পুলিশ লাইনের কাছে নামতে বাধ্য হন। দীর্ঘ জ্যামের কারণে অনেক পর্যটক ফুটপাত ধরে হেঁটেই কলাতলী যান। আগে রুম বুক না থাকায় একটি কটেজে বাড়তি দামে রুম নিতে হয়েছে। বের হয়ে দেখেন রুম ভাড়ার মতো রেস্তোরাঁ-যানবাহনেও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে।

খালি নেই হোটেল-মোটেলের কক্ষ
ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার শহর ও আশপাশের হোটেল-মোটেল এবং গেস্ট হাউজে ভাড়া দেওয়ার মতো কোনো কক্ষ খালি নেই। বুকিং ছাড়া এসে অনেকে খোলা জায়গায় রাত কাটিয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। পর্যটকদের ভিড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল-গেস্ট হাউসের কেউ কেউ অন্য সময়ের চেয়ে দাম বাড়িয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে, বাস, ট্রেন ও ফ্লাইটেও একই অবস্থা। ফ্লাইটেও কোনো সিট খালি নেই। বিমান ও ট্যুরিজম সাইটগুলোর ফ্লাইট বিভাগে ঢোকাই যাচ্ছে না।’ 

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘কক্সবাজার সৈকতের নিকটবর্তী পাঁচ শতাধিক হোটেলে-মোটেলে এক লাখ ৩০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। গত কয়েকদিন কোনো হোটেলে কক্ষ খালি যাচ্ছে না। অতিরিক্ত দাম আদায়ের বিষয়টি জানা নেই। তবে, কোনো পর্যটক প্রমাণসহ অভিযোগ করলে প্রশাসনের সহায়তায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বিড়ম্বনা এড়াতে পর্যটকদের কক্সবাজার ভ্রমণের আগে অনলাইনে হোটেল বুকিং দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পর্যটকদের মধ্যে অনেকের অভিযোগ, আগের মতোই রুম ভাড়া, খাবার বিল ও যানবাহনে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে।

সম্প্রতি এমন অভিযোগে অভিযান চালিয়ে কলাতলীর কটেজ জোনে দুই আবাসিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ও করেছে জেলা প্রশাসন। অভিযোগ পেলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অভিযান জানুয়ারি পর্যন্ত নিয়মিত করা হবে বলেও জানিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. তানভীর হোসেন।

সৈকতে দায়িত্বপালন করা জেলা প্রশাসনের কর্মী বেলাল হোসেন ও মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, টানা ছুটির সূত্র ধরে কক্সবাজারে ১৩ ডিসেম্বর থেকে পর্যটক সমাগম বেড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চাকরিজীবীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও পরিবার নিয়ে কক্সবাজার আসছেন। তারা জানান, অনেকে আগাম বুকিং ছাড়া চলে আসায় সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বাড়তি টাকায় রুম নিতে বাধ্য হয়েছেন। সমুদ্রস্নানে পর্যটকের ভিড় বাড়ায় নিরাপত্তা ও সচেতনতার পাশাপাশি লাইফ গার্ড কর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সি সেইফ লাইফ গার্ড সংস্থার ইনচার্জ মোহাম্মদ ওসমান।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল কালাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সজাগ রয়েছে পুলিশ। কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যদিকে পর্যটকবাহী সাত থেকে আট হাজার যানবাহন কক্সবাজার শহরে আসছে। এতে যানজট তৈরি হয়। তবে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদস্যরা প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন বলে দাবি তার।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকদের সেবা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। হোটেল কক্ষের ভাড়া ও রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরাপত্তার ব্যাপারেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কক্সবাজার শহর ও সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর পর্যটন স্পট, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, টেকনাফের ঐতিহাসিক প্রেমের নিদর্শন মাথিন কূপ, নেচার পার্ক, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধ বিহারসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের জমজমাট সমাগম। পর্যটকের জোয়ার এসেছে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটেও।
 
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ